বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০০৭

পরবাস

যখন দেশে ছিলাম তখন মনে হত বাইরে যেতে পারলে একটা স্বপ্ন পুরন হবে। বিশ্ব-বিদ্যালয় থেকে পাশ করলাম অনেক স্বপ্ন নিয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে। বাবা অবসর প্রাপ্ত। সবার অনেক আশা এবার একটা ভাল চাকরি পাব। দেশের ভাল বিশ্ব-বিদ্যালয় থেকে খুব ভাল বিষয়ে লেখাপড়া করে আমি ও স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু ভাল ভাল কম্পানিগুলোতে বারবার আবেদন করে যখন সাড়া পেলাম না তখন স্বপ্ন ভঙ্গ হল। অবশেষে বুঝলাম ভিতরে লোক না থাকলে সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অবশেষে আমার স্থান হলো এক আই এস পি ফার্মে । প্রথম তিন মাস বেতন পাচ হাজার টাকা। নিজের ইঞ্জিনিয়ারং ডিগ্রী নিয়ে খুব লজ্জা হচ্ছিল। কঠিন চাকরি, আমার কাজ ছিল ক্ষুদ্র তরঙ্গ সংযোগ করা, এবং সংযোগকারী কে তাতক্ষনিক সেবাপ্রদান। অধিকাংশ সময় বাইরে বাইরে কাজ, ৮-১০ তালা বিল্ডিং এর ছাদের উপরে কাজ। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা, টানা রোদের ভিতরে ঘন্টা খানেক কাজ করা খুব কঠিন। আর অধিকাংশ গ্রাহক ছিল ঢাকার আশে পাশে। প্রায় দিন একটা নতুন ঠিকানা নিয়ে বের হয়ে পড়তে হত সাভার কিংবা নারায়নগঞ্জ এর উদ্দেশে। আকাশ দুরত্ব হত ২০-২৫ কিমি. । সেখানে যেয়ে সম্পুর্ন অনুমান এর উপর নির্ভর করে একটা সংযোগ করা একধরনের চ্যালেঞ্জ । তবে আমি কোন দিন অসফল হইনি। কাজের কষ্টের মাঝে এটাই ছিলো আনন্দ। মাঝে মাঝে একটা লিংক করার পর গতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম।
ঢাকা শহরের আমার প্রায় এক বছর এর জীবন ছিল আমার জন্য দুঃসহ। প্রতি-দিন গ্রামীন এ প্রায় যুদ্ধ করে অফিস করা, গ্রাহক সেবার কাজে দৈনিক প্রায় ঘন্টা খানেক টানা রোদে ঢাকা শহর ভ্রমন। জীবন বড় দুঃসহ মনে হচ্ছিল। মাঝে মাঝে মনে হত এ জীবনের কোন তাৎপর্য নেই। নিজের স্বপ্ন ভঙ্গ থেকে তখন বাবা-মা এর স্বপ্ন পুরনের ব্যার্থতা অনেক বেশি কষ্ট দিত। তখন মনে হত যদি বিদেশ যেতে পারতাম তাহলে মনে হয় সব সমস্যার সমাধান হবে। অফিসে কাজের ফাকে সময় পেলেই বিদেশে প্রফেসর দের কাছে আবেদন করতাম। আর তীর্থর কাকের মত বসে কখন একটা রিপ্লাই আসবে।
প্রায় শ-খানেক আবেদন করার পর মাঝে মাঝে একটা দুইটা রিপ্লাই আসতো। কিন্ত স্কালারশিপ এর কথা বললেই অধিকাংশ নেতিবাচক মন ভাব দেখাতো। অবশেষে একজন ইতিবাচক সাড়া দিল। তারপর আর তার কোন সাড়া নেই, তাই এটার আশাও বাদ দিলাম। অবশেষে একমাস পর হঠাৎ করেই আবার মেল খুলে দেখি সেই প্রফেসর এর মেল। এ এক মাস তিনি জাপানে সেমিনার এ ছিলেন। আমার ফোন নাম্বার চাইলেন। প্রথম দুই বার ফোন করলেন আমি গ্রামীন এ উঠার পর। তাই কোন কথা বুঝতে পারলাম না। তৃতীয় দিন অফিসের কাজ শেষ করে সাভার থেকে মাত্র ক্যাব এ উঠছি এ সময় বিদেশি ফোন। চারিদিকে শব্দ এর ভিতর চলন্ত ক্যাব এ বসে প্রফেসর আমার ভাইভা নিলেন। ভাইভা শেষে বললেন আমি পাশ। আমার ঠিকানা ই-মেল করতে বললেন কাগজ পত্র পাঠাবার জন্য। মনে হল অবশেষে মুক্তি।
এর ভিতরে ও অপেক্ষাই ছিলাম যদি কোন ভাল প্রতিষ্টানে চাকুরি পাই তাহলে সব বাদ। কারন জানতাম বিদেশ গেলে দেশে ফিরে আশা খুব কঠিন হবে। তাই শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি যদি দেশে একটা ভাল চাকরি পাই। আজ যখন যে সব বন্ধু ভাল যায়গাই আছে, তাদের বলি তোর চাকরিটা আমি পেলে আমি বিদেশে আসতাম না তাই শুনে ওরা আমাকে বোকা বলে। কিন্তু এই ক্ষন স্থায়ী জীবনে যদি মা-বাবা ভাই বোন নিয়ে এক সাথে থাকতে না পারলাম, আজীবন বিদেশে গাধার খাটনি করে গেলাম, আর কয়ে বছর পর পর কিছু দিনে জন্য দেশে ফেরে গেলাম। না আমার এজীবন ভাল লাগে না। নিজের পরিশ্রম এর অর্জন গুলো যদি নিজের প্রিয় জনদের সাথে এক সাথে উপভোগ করতে না পারলাম তবে সে অর্জন কেমন জানি ফিকে।
মাঝে মাঝে এ সব ভাবলে পুরো জীবন টাকেই ফিকে মনে হই।

আমি

আচ্ছা I মানে যদি আমি হয় তাহলে me - এর অর্থ কি আমি না আমকে ? আমারতো মনে হয় দুইটাই ঠিক।
যাই হওক , আমি তারেক , অতি সাধারণ বাঙ্গালি। র্বতমানে আছি সউল এ। বালি নিয়ে আমার কাজ। সারাদিন বালি নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে জীবন- টা বালি ময় হইয়ে গেছে। বাংলা খাবার মিছ করি, কারণ আমি যেখানে থাকি সেখানে রান্না করা নিষেধ।মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে কাজ শেষে রাতের আকাশ দেখি। আর প্রতাশা করি আমার দেশের জন্য একটা নীল আকাশ-এর।
সিরাজ দৌলার শেষ আক্ষেপ কবে কাটবে জানি না। বাংলার আকাশ কবে র্দূযোগ এর ঘন ঘটা মুক্ত হবে তাও জানি না। তবে নীল আকাশের প্রতাশিদের সাথে আজীবন কাজ করে যাবার প্রতাশ রাখি।

এই ব্লগটি সন্ধান করুন