মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

X-Factor


X-Factor
কোন সমীকরণে অজ্ঞাত রাশির নাম x. যখন কোন কিছুর মান জানা থাকে না তখন তাকে x হিসাবে ধরে নিয়ে জানা মান গুলো দিয়ে একটা সমীকরণ তৈরি করে x এর মান বের করা হয়। যেমন ধরা যাক a এবং b দুইটা জানা রাশি। এখন দুটোকে যদি সমান প্রমান করতে চায় তবে লিখতে পারি,

a= xb
সংক্ষেপে এটাকে বলে x-factor.
এখন আসা যাক কেন এই সহজ বিষয়টা নিয়ে এত প্যাচাল। কারণ আমি এই সধারণ সমীকরণ দিয়ে জটিল একটা জিনিষের সংগ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছি। অন্তত পক্ষে নিজের ভিতর অনেক না জানা কিংবা জটিল বিষয়ের সমাধাণ খোজার চেষ্টা করেছি। এ মহা বিশ্বের বিশালতার কাছে আমি অতি ক্ষুদ্র, অতি নগন্য। নিচের এই ছবিটা দেখলে বোঝা যায় এই মহা বিশ্বের তুলনায় আমাদের পৃথিবী কত ক্ষুদ্র কত সামান্য।
From Blogger Pictures

From Blogger Pictures

From Blogger Pictures

From Blogger Pictures

From Blogger Pictures

আর আমরা এক একজন এই বিশাল পৃথিবীর অতি সামান্য একজন মানুষ। আমরা কল্পনার থেকেও বিশাল এই মহা বিশ্বের সব কিছুকে আমাদের এই অতি সামান্য মানব মস্তিস্ক দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করি। সব থেকে মজার ব্যাপার যে আমরা অতি সহজ সরল কিছু জানা জ্ঞান দিয়ে অনেক জটিলতর অজানা বিষয়ের ব্যাপারে সমাধান দাড় করিয়ে ফেলি। একজন বিজ্ঞানী হওয়ার প্রথম শর্ত হল আমরা যে সমগ্র জ্ঞানের মাত্র অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ জানি তা মনে প্রাণে মেনে নেওয়া। তাই আইনিষ্টাইন বলেছিলে আমি একটা সমুদ্রে একটা আলপিনকে ডুব দিয়ে তুলে আনলে আলপিনের মাথায় যে পরিমানে পানি জমে থাকে তা থেকেও কম জানি।
এখন আসা যাক এর সাথে x factor এর কি সম্পর্ক। এখন যদি ধরি আমাদের জানা, বা আবিস্কিরিত জ্ঞানের পরিমান b এবং মহাবিশ্বের সকল রহস্যময়তা জানা অজানা বিষয়ের পরিমান a. এখন a এবং b কে সমান করতে গেলে বিশাল শক্তিশালী একটা x লাগে। আমাদের জানা জ্ঞান দিয়ে এই x এর মান দেওয়া সহজ নয়। যুগ যুগ ধরে নানা মহামানব এই x এর মান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের প্রায় সবাই x এর মান হিসাবে ধরে নিয়েছেন ঈশ্বর বা আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তাকে।
একেক জন মানুষ একের কারনে আল্লাহকে বিশ্বাস করে। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে আমার বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবী, পরিচিত জনের মধ্যে এটা নিয়ে একটা জরীপ চালিয়ে ছিলাম। সবার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম কেন ধর্ম পালন কর। আমি কোন গানিতিক পরিসংখ্যান তৈরি করিনি,তবে তাদের অধিকাংশের উত্তর ছিল এরকম
১) সঠিক ভাবে জানে না কেন ধর্ম পালন করে। তাদের কাছে জিনিষটা কিছুটা সবাই করে তাই করি টাইপের। কখনও সিরিয়াস ভাবে এ নিয়ে ভেবে দেখেনি।
২) এদের ঈশ্বর খুব কঠিন টাইপের কেউ। ধর্ম পালন না করলে বিপদে পড়তে হবে বা মরে গেলে দোজখে যেতে হবে কঠিন শাস্তি হবে তাই এরা ধর্ম পালন করে।
৩) এই দলের লোকেরা আবার ঈশ্বরকে মনে করে সব ভাল কিছু দেনেওয়ালা। নামাজ পড়লে বা ঈশ্বরের ইবাদত না করলে ভাল কিছু জীবনে পাওয়া যাবে সেই লোভে এরা ধর্ম পালন করে।
৪) এই দলের লোকেরা ধর্ম পালন করে মনের শান্তির জন্য। এদের কাছে নামাজ কিছুটা মেডিটেসন।
আমি নিজেকে যখন প্রশ্ন করলাম, এদের কোন দলে নিজেকে ফেলতে পারলাম না। যেহেতু এই লেখা লিখছি তাই প্রথম দলে পড়ার প্রশ্নই আসে না। আর আল্লাহকে আমার কখনও এত প্রতিহিংসা পরায়ান ভাবতে ইচ্ছা করে না। শুধু তার কথা মত না চললে, তার ভয়ে কুকড়ে না থাকলে তার নিজের এত সুন্দর সৃষ্টিকে সে এত বড় শাস্তি দিবে, না আমি অন্তত পক্ষে মানতে পারি না। তাই ২য় দলেও পড়িনা। আর ধর্ম পালন করলেই সব ভাল কিছু পাওয়া যায় এটা আমি নিজের আভিজ্ঞতা থেকে মানতে পারিনা। খুব ধার্মিক আপাত ফরহেজগার লোকেও মহা বিপদে পড়তে দেখেছি। একই ভাবে অনেক বদমাস ফাজিল অধার্মিক লোকের শোভাগ্যের মহা উৎসব দেখেছি। তাই মনে হয়নি আল্লাহ ভাল কিছু পাওয়ার সমীকরণ এত সোজা করে দিয়েছেন। সব শেষে বাকি থাকে আত্তিক শান্তি। আমি একসময় খুব ধার্মিক ছিলাম। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। একটা অদ্ভুত আত্তিক শান্তি ধর্মের মাধ্যমে পাওয়া যায় তা নিজে অনুভব করেছি। কিন্তু যখন দেখি একজন অন্য ধর্মের লোক অন্য ভাবে সে একই শান্তি উপলব্ধি করে তখন এই বিশ্বাস টা কিছুটা টলে গেছে। এর পর মেডিটেশন সম্পর্কে জানার পর দেখলাম একই শান্তি কোন ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াও পাওয়া যায়। তাই এই বিশ্বাস টা বেশি দিন ধরে রাখতে পারিনি।
এর পর যখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়া লেখা শুরু করলাম দেখলাম আমি কত কিছু জানি না। তখন আমার মনে হল আমি আল্লাহতে বিশ্বাস করি কারন আমি জানি, আমি কত কিছু জানি না, কত কিছু জানা সম্ভব না । তাই ঈশ্বর আমার কাছে x factor, যাকে দিয়ে আমার জানা আর অজানা জগৎতের এই বিশাল অসম সমীকরণকে নিমিষে সমাধান করে ফেলা যায়। সৃষ্টি কর্তা বলে কিছু নেই একথা বলার মত প্রয়োজনীয় তথ্য আমার হাতে নেই। সম্ভবত আর ও শত শত বছরেও এই তথ্য আমরা পাবো না। আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিস্ক দিয়ে সব কিছুর সমাধান করতে পারি না, সত্যি পারি না। যেমন আমরা ত্রিমাত্রিক জগতের মানুষ ধারনা করতে পারি না চার বা তার বেশি মাত্রার জগৎ কেমন হতে পারে। মহাবিশ্বে অধিকাংশ বিষয় এইরকম আমাদের চিন্তার সীমার বাইরে, আমরা সেটা ধারণাও করতে পারি না।
আমি সব থেকে বেশি অবাক হই যখন দেখি মানুষ তার এই সামান্য জ্ঞান দিয়ে ঘোষনা করে মহা বিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ বলে কেউ নেই। বিষয়টা কেমন জানি একটা পিপড়া একটা সহস্র তালা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় দাড়িয়ে ধারনা করার চেষ্টা করছে পুর বিল্ডংটায় কি হচ্ছে, যখন তার ক্ষমতা নেই তার নিজের তলায় কি হচ্ছে তা পুরোপুরি জানার বা বোঝার।
আমি একজন বিজ্ঞানের একনিষ্ট ভক্ত হিসাবে এটা মানতে পারি না। তাই x factor ই আমার নিজের কাছে ঈশ্বরের বিশ্বাস।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষায়
সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর॥
কত বর্ণে কত গন্ধে, কত গানে কত ছন্দে,
অরূপ তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়পুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর।
তোমায় আমায় মিলন হলে সকলি যায় খুলে--
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠে তখন দুলে।
তোমার আলোয় নাই তো ছায়া, আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দরবিধুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর॥

1 টি মন্তব্য:

jeba zaman বলেছেন...

ভালো হয়েছে . কিন্তু এখনো পরিষ্কার না তুমি কিভাবে আল্লাহ কে ডিফাইন করবে ?

এই ব্লগটি সন্ধান করুন